চলতি বছর আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার ঘটনা। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পুলিশের তথ্যানুযায়ী গত নয় মাসে নারী ও শিশুর প্রতি মোট ১৩ হাজার ৮৮০টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। তার মধ্যে সর্বোচ্চসংখ্যক নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা এ বছরের মার্চ ও এপ্রিলে ঘটেছে। আর বিশ্লেষকদের মতে, পুলিশের অপরাধ পরিসংখ্যানে উঠে আসা তথ্যের তুলনায় বাস্তব পরিস্থিতি আরো খারাপ। প্রতিনিয়ত এমন অনেক নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে, যেগুলো সামনে আসছে না। বিগত কয়েক মাসে নারীর প্রতি একাধিক সহিংসতার ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। ওই সময়ে ধর্ষণসহ নারী ও শিশু নির্যাতনের অন্য ঘটনাও বেড়েছে। পুলিশ এবং বিশ্লেষকদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিগত এপ্রিলে পুলিশের তথ্যানুযায়ী নারী ও শিশু নির্যাতনের ২ হাজার ৮৯টি ঘটনা ঘটেছে। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের পর এ সংখ্যা ৩২ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। তাছাড়া ২০২৪ সালের শেষ চার মাসের সঙ্গে তুলনা করে দেখা যায় ২০২৫ সালের প্রথম চার মাসে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে ১ হাজার ২১৮টি। ২০২৪ সালের শেষ চার মাসে ৫ হাজার ৭৯৫টি নারী ও শিশু নির্যাতনের অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল আর ২০২৫ সালের প্রথম চার মাসে এ সংখ্যা বেড়ে ৭ হাজার ১৩টিতে দাঁড়িয়েছে।
সূত্র জানায়, রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে পুলিশ বাহিনী। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর জনগণ পুলিশের ওপর আস্থা হারিয়েছে। পুলিশ সদস্যরা এখনো মনোবল নিয়ে দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণ প্রস্তুত নয়। আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণে দ্বিধাগ্রস্ত তারা। অনেক ক্ষেত্রে এ সুযোগ অপরাধীরা কাজে লাগাচ্ছে। তবে সরকার ও সমাজের অধিকাংশ মানুষ এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে প্রশ্রয় দিচ্ছে না। তাছাড়া দেশে এসব অপরাধের বিচারিক প্রক্রিয়া সহজ নয়। এটি ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ। যা নারীদের ক্ষেত্রে বিষয়টা আরো কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বরং অনেক ক্ষেত্রেই হেনস্তা কিংবা নির্যাতনের শিকার নারীকেই দায়ি এবং বিচার চাইতে গেলে সামাজিকভাবে আরো বেশি সম্মানহানির আশঙ্কা থাকে। এসব কারণে নির্যাতিত হয়েও চুপ থাকে ভুক্তভোগীদের একটি বড় অংশ। বিগত কয়েক মাসে আলোচিত কয়েকটি ঘটনায় দেখা গেছে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুক্তভোগী নারীকেই দোষারোপ করা হয়েছে।
এদিকে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক জানান, নারী নির্যাতন প্রতিরোধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স ১০ মার্চ ২০২৫ থেকে হটলাইন চালু করা হয়েছে। ভিকটিমকে যাতে দ্রুততার সঙ্গে আইনগত সহযোগিতা প্রদান করা যায়। পুলিশ অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নারী নির্যাতনের ঘটনা এবং সংশ্লিষ্ট মামলা তদন্ত করে থাকে। প্রতিটি থানায় নারী ও শিশু সার্ভিস ডেস্ক রয়েছে। আগত সেবাপ্রত্যাশীদের সেখানে নারী পুলিশের মাধ্যমে সেবা প্রদান করা হয়। পাশাপাশি আমাদের পুলিশ সদস্যরা যখন মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের সভা, উঠান বৈঠক, ওপেন হাউজ ডে করে, তখন কমিউনিটিকে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ বিষয়ে সচেতন করা হয়। নারী নির্যাতন প্রতিরোধে সবার সমন্বিত ভূমিকা অপরিহার্য। এক্ষেত্রে সামাজিক, পারিবারিক মূল্যবোধ জোরালো ভূমিকা রাখে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

বাড়ছে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা
- আপলোড সময় : ৩০-০৫-২০২৫ ০৭:৩৭:৪৯ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ৩০-০৫-২০২৫ ০৭:৩৭:৪৯ অপরাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ